নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনকে দুই ভাগে ভাগ করেছে ইসি। ৬টি আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবং বাকি ১০টি আসনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। এছাড়াও চট্টগ্রামের ২ হাজার ২৩টি ভোটকেন্দ্রে ২৫ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি তদারকির জন্য চট্টগ্রামে ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জরিমানা ও সতর্ক করেছেন তারা। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৯৬ প্লাটুনের প্রায় ১ হাজার ৯২০ জন সদস্য, র‌্যাবের ৩২ প্লাটুনে প্রায় ৭৫০ জন, ৮ হাজার পুলিশ সদস্য, কোস্ট গার্ডের ১৫০ জন, আনসার-ভিডিপির ২৪ হাজার ২৭৬ জন সদস্যসহ মোট ২ হাজার ২৩টি কেন্দ্রে সর্বমোট ৩৫ হাজার ৬৫৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও ৩ জানুয়ারি থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামছে সেনাবাহিনীর ৫০০ সদস্য। এর বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ ৩ জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য থাকবেন।

এদিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, সকালে যখন মানুষ দেখবে- ভোটের পরিবেশ সুন্দর, তখন মানুষ (কেন্দ্রে) আসবে। চট্টগ্রামের ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। সোমবার (১ জানুয়ারি) নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

অপরদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলেছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। তিনি বলেন, ,মহানগরীতে যেসব আসন আছে, সেগুলোর কোনো কেন্দ্রেই শঙ্কার কারণ নেই। একটা জিনিস আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, নির্বাচন ঘিরে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান, প্রতিপক্ষ এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে চান, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার (১ জানুয়ারি) নগরের জামালখান ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় সিএমপি কমিশনার আরো বলেন, নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে যেন সম্পন্ন হয়, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে আমরা নগরজুড়ে অপরাধ দমনে রোবাস্ট পেট্রোলিং পরিচালনা করছি। আমাদের সঙ্গে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন যুক্ত হয়েছে। বিভিন্নস্থানে স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে চেকপোস্ট বসিয়েছি।

তিনি বলেন, নগরের ৬০৭টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রগুলোর অবস্থান এবং কোন কেন্দ্রে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে সেটার সর্বশেষ পর্যালোচনা করতে মাঠে নেমেছি। আমরা ঘুরে দেখছি, সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হবে।

কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা পরিপত্র পেয়েছি। সে অনুসারে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ লাইসেন্সধারী অস্ত্র ব্যবহারকারী যারা আছে, তারা বহন এবং প্রদর্শন করতে পারবেন না। করলে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন,  ভোটারদের বলবো, আপনারা নির্বিঘ্নে ভোট দেবেন। আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিএমপি কমিশনার বলেন, ভোটকেন্দ্রে সকালে ব্যালট যাবে।তিনি বলেন,  মহানগরের ৬০৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। সেগুলোতে আমাদের ফোর্সের ব্যবস্থাপনা এবং উপস্থিতি একটু বেশি থাকবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ৪ হাজার ৫০০ জন অফিসার ও ফোর্স মাঠে থাকবে জানিয়ে কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি যুক্ত হয়েছে। তারা রাস্তায় টহল দিচ্ছে। আমাদের সঙ্গে আনসার সদস্যরা থাকবেন, তারা কেন্দ্রভিত্তিক আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে ‘এইড টু সিভিল পাওয়ার’ হিসেবে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে যুক্ত হবেন। নগরের প্রবেশ মুখগুলোতে চেকপোস্ট ও নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এছাড়া নগরের বিভিন্ন থানায়ও চেকপোস্ট ও নিয়মিত তল্লাশি চালানো হবে।

এদিকে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৫ সংসদীয় আসনে ৯৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার ( ৩০ ডিসেম্বর) থেকে নগরী ও জেলার উপজেলাগুলোতে টহল শুরু করেছে বিজিবি। এর মধ্যে বিজিবি চট্টগ্রাম–৮ ব্যাটালিয়নের অধীনে ১১টি সংসদীয় আসনে ৭৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজিবির পাশাপাশি চট্টগ্রামের এই ১৫ নির্বাচনী এলাকায় নেমেছে র‌্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং একটি করে গোয়েন্দা টিম। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে নামছে সেনাবাহিনীও।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৫ আসনে (সন্দ্বীপ ছাড়া) শুক্রবার থেকে ৯৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি ছাড়াও এই ১৫টি সংসদীয় এলাকায় র‌্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং সাথে একটি করে গোয়েন্দা টিমও মাঠে নেমেছে। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামবে সেনাবাহিনীও। সন্দ্বীপে কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে র‌্যাব–৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, চট্টগ্রামের নগরী ও জেলার ১৬টি আসনে র‌্যাবের দুইটি করে টহল টিম এবং একটি করে গোয়েন্দা টিম শুক্রবার ( ৩০ ডিসেম্বর) থেকে মাঠে নেমেছ। তারা আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। যেন নির্বাচনের আগে কিংবা নির্বাচন পরবর্তী যেকোনো ধরনের সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, দায়িত্বপালনকারী টিমগুলোর সাথে নির্বাচনের দিন বাড়তি কিছু ফোর্স যুক্ত করা হবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।