এলএনজি টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটি, গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ
দুর্ভোগে চট্টগ্রামের আবাসিক গ্রাহক
কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালের ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
পেট্রোবাংলার দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে কী ধরনের কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও সিলেটেও গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম গ্যাসবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সার কারখানা কাফকো ও সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফের গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে কবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। এক প্রকার খাবার সংকটেই পড়ে গেছে চট্টগ্রামের মানুষ।
ফলে মানুষের ঘরে চুলা জ্বলছে না। বন্ধ রয়েছে রান্না-বান্না। এর ফলে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে খাবার হোটেলগুলোতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ তদারকি করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড। গ্যাসের সরবরাহের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করে আমদানিকৃত ওই এলএনজির ওপর।
কর্ণফুলী গ্যাসের কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীতে সঞ্চালন পাইপলাইনের (কনভার্টারের) মাধ্যমে এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ হয়। দুটি কনভার্টারের মধ্যে একটি গত নভেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। একটি পাইপলাইন দিয়েই এতদিন সরবরাহ চলছিল।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া কনভার্টারটি কমিশনিং করা হয়েছে। পাশাপাশি অপর কনভার্টারটি রি-কমিশনিং করা হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। কিন্তু মধ্যরাত থেকে নতুন কমিশনিং হওয়া কনভার্টারের জেনারেটর বিকল হয়ে গেছে। এজন্য পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম গ্যাসবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সার কারখানা কাফকো ও সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস নেই ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনেও। এছাড়া চট্টগ্রামে ইস্পাত, সিমেন্ট, শিপ ব্রেকিং, ঢেউটিন, গার্মেন্টসের মতো শিল্প খাতে কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ৬ লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগ গ্যাসবিচ্ছিন্ন।
চট্টগ্রামে আগে গ্যাস সংকট হলে সিলেট এবং কুমিল্লা অঞ্চলের গ্যাস আনা হতো আশুগঞ্জ বাখরাবাদ পাইপলাইন দিয়ে। কিন্তু এলএনজি আমদানি শুরু করার পর আশুগঞ্জ বাখরাবাদ পাইপ লাইনকে বাল্ব লাগিয়ে ওয়ান-ওয়ে করে ফেলা হয়। ফলে চট্টগ্রাম থেকে গ্যাস শুধু নেওয়া যায়, আনা যায় না।
অপরদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অনেক এলাকায়ও গ্যাস সংকট দেখা গেছে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেটের এফএসআরইউটি গত বৃহস্পতিবার চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
এদিকে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় গ্যাসচালিত গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে নগরীতে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গাড়ি চালকরা বলছেন, দীর্ঘ লাইন ধরে তারা স্বল্প গ্যাস নিয়েছেন। গাড়ি গ্যাস ফুরিয়ে গেলেও পুরো দিনের ভাড়া দিতে হবে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এখন গ্যাসের সরবরাহ ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে। এলএনজি আমদানি করতে হয় স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে। ডলার সংকটের কারণে এই মুহূর্তে এলএনজি আমদানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। কিন্তু এখন এলএনজি টার্মিনালে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান তারা।