আবারো ৯ দিনের ক্লাস বর্জন কুবি শিক্ষক সমিতির

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষক সমিতির দাবি না মানায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৯ দিনের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করবেন শিক্ষক সমিতি। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষা এর আওতায় থাকবে না।

সোমবার (১৮ মার্চ) জরুরি সাধারণ সভা শেষে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “আমাদের যে পূর্বের দাবি ছিলো সেগুলো উপাচার্য মানেননি। তাই আমরা পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯ মার্চ (মঙ্গলবার) থেকে ২৭ মার্চ (বুধবার) পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করছি।”

তাদের এই ক্লাস বর্জন প্রক্রিয়ায় মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট এগুলো অন্তর্ভুক্ত কিনা এই প্রশ্নের জবাবে সভাপতি ড. আবু তাহের বলেন, “চূড়ান্ত পরীক্ষা (সেমিস্টার) হবে, তবে বাকি মিডটার্ম বা প্রেজেন্টেশন এসাইনমেন্ট সকল বিষয়ই এর অন্তর্ভুক্ত।”

এদিন দুপুরের পর শিক্ষক লাউঞ্জে জরুরি সাধারণ সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভা শেষে সমিতির আগে নেয়া সিদ্ধান্ত এবং দাবি-দাওয়ার বিষয় কথা বলতে উপাচার্য দপ্তরে যান তারা। উপাচার্যের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর তার দপ্তর থেকে ক্ষুব্ধ অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সমিতির নেতাদের। সেখান থেকে আসার পর বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করে সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংকট দেখছেন না বলছেন৷ উনি বলছেন এই সংকট শিক্ষক সমিতির, উনার নয়। এবং আমাদের পূর্বের যে সিদ্ধান্ত এবং দাবিসমূহ নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলাম সেটি তিনি পড়েও দেখেন নি৷ আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সংকটে হস্তক্ষেপ করুক, এই প্রশাসন থেকে আমরা আর এই সংকটের সমাধান পাবো বলে আশ্বাস রাখতে পারছি না।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমি উনাদের বলেছি, শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে ৷ কিন্তু উনারা আমার রুমে এসে নিজেরা নিজেরা গোলযোগ করেন ৷ কথা বলার কোনো পরিবেশ রাখেন না তারা। তাদের বলেছি আপনাদের আইনসিদ্ধ যেকোনো দাবি অবশ্যই কার্যকর করব। শুধু শুধু শিক্ষার্থীদের জিম্মি করবেন না।’

এর আগে, গত ১২ মার্চ জরুরি ভিত্তিতে ডাকা এক সাধারণ সভায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি ও তিন সিদ্ধান্ত পেশ করা হয়।

শিক্ষক সমিতির ৭ দফা দাবিগুলো হলো-

১. গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যের উপস্থিতিতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা, বহিরাগত সন্ত্রাসী ও কিছু অছাত্র কর্তৃক শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলায় নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কারপূর্বক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার ও জড়িত সবার সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিত করা এবং হামলায় মদদদানকারী প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ।

২. শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজ অবমুক্ত করা।

৩. অধ্যাপক গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত শিক্ষকদের অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

৪. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক বিভিন্ন বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ও অনুষদসমূহের ডিন নিয়োগ এবং ইতোমধ্যে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যেসব বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যাহার করা।

৫. শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে আইনবহির্ভূত ও অবৈধ শর্ত আরোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে যে সীমাহীন বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, দ্রুততম সময়ে সেসবের নিষ্পত্তিকরণ।

৬. ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা রহিত করে আগের নীতিমালা বহাল রাখা।

৭. ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা।