বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারালো আফগানিস্তান
চলমান বিশ্বকাপে অবশেষে জয়ের দেখা পেলো আফগানিস্তান। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে আফগান রূপকথার জন্ম দিলো গুরবাজ-মুজিবরা।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে নিজদের তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনার পর মাঝখানে ছন্দপতন ঘটে আফগানিস্তানের।
গুরবাজ ও ইকরাম আলিখিলের অর্ধশতকে ভর করে ২৮৪ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। গুরবাজ ৫৭ বলে ৮০ ও ইকরাম ৬৬ বলে ৫৮ রান করেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আলিদ রশিদ নেন ৩টি উইকেট।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে আফগানিস্তান, রহমানউল্লাহ গুরবাজের চমৎকার ব্যাটিংয়ে ১১৪ রানের উদ্বোধনী জুটি হাতছানি দিচ্ছিল বড় স্কোরের। যদিও প্রত্যাশিত রান হয়নি মাঝের ওভারে ইংলিশ বোলারদের চাপে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ইকরাম আলখির হাফ সেঞ্চুরির পর রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের ক্যামিও ইনিংসে ২৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর জমা পড়ে বোর্ডে।
২৮৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জনি বেয়ারস্টোর উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। দলীয় ৩ রানে ৪ বলে ২ রান করেন বেয়ারস্টো। এরপর ক্রিজে আসা জো রুটকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ডেভিড মালান।
শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি কাজ সারেন আফগান স্পিনাররা। মোহাম্মদ নবী, মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি উইকেট নেন। ফজলহক ফারুকী ও নাভিন উল হক গতি দিয়ে চমক দেখান। ২২ ওভারের মধ্যে ১১৭ রানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৫ উইকেট তুলে নেয় তারা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট পান ফারুকী। নিজের প্রথম বলে জনি বেয়ারস্টোকে (২) এলবিডব্লিউ করেন আফগান পেসার। তারপর দুই স্পিনার মুজিব ও নবী ভেঙে দেন টপ অর্ডার। ১৩ ওভারের মধ্যে তাদের দুজনের শিকার হন জো রুট (১১) ও ডেভিড মালান (৩২)। ৬৮ রানে ৩ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
একশ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফেরা চতুর্থ ব্যাটার জস বাটলার। নাভিন উল হক তাকে ৯ রানে বোল্ড করেন। রশিদ খানের শিকার হন লিয়াম লিভিংস্টোন (১০)। হ্যারি ব্রুক এই বিপদে একলা হাল ধরেন। উপযুক্ত সঙ্গ পাননি। স্যাম কারান (১০) নবীর বলে রহমত শাহের ক্যাচ হন।
মুজিব টানা দুই ওভারে ক্রিস ওকস ও ব্রুককে ফেরালে ইংল্যান্ডের শেষ প্রতিরোধ থেমে যায়। ব্রুক ইনিংস সেরা ৬৬ রান করে আউট হন। তখনও দল দুইশর ধারেকাছে নেই। ১৬৯ রান করতেই প্যাভিলিয়নে আট ব্যাটার।
মালান ও ব্রুকের গড়া ইনিংসের ৩৫ রানের সর্বোচ্চ জুটি ভাঙার পথে ছিলেন মার্ক উড ও আদিল রশিদ। কিন্তু পারেননি। নবম উইকেটে তারা তোলেন ইনিংসের তৃতীয় সেরা ২৯ রান। রশিদকে (২০) ফেরান রশিদ। কাকতালীয়, দুই ইনিংসেই দুই রশিদ একে অন্যের শিকার হয়েছেন।
উড ও রিচি টপলির জুটিতে দুইশ পার করে ইংল্যান্ড। দলের পরাজয় নিশ্চিত জেনেও ঝড় তোলেন টপলি। তিনটি চার মারেন। ৪১তম ওভারে ইংল্যান্ডকে থামতে হয়। উডকে (১৮) বোল্ড করে দলকে উল্লাসে মাতান রশিদ। টপলি অপরাজিত ছিলেন ১৫ রানে।
ইংল্যান্ডকে ২১৫ রানে অলআউট করতে রশিদ ও মুজিব সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি পান নবী। ১৬ বলে ২৮ রান করে এবং ৫১ রান খরচায় তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা মুজিব।
ওয়ানডে ইতিহাসে এর আগে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড, প্রত্যেকবার বিশ্বকাপে। সিডনিতে ২০১৫ সালের হার ৯ উইকেটে, গতবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পরাজয় ১৫০ রানে। এবার তারা ইংলিশদের চমকে দিয়ে ইতিহাস গড়লো।
বিশ্বকাপে টানা ১৪ ম্যাচ হারা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন আফগানিস্তানের কোচ জনাথন ট্রট, যাকে তার দেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছক কষতে হয়েছে। এই প্রথমবার দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন তিনি। আর তাতেই বাজিমাত করলো আফগানরা। ২০১৫ বিশ্বকাপে অভিষেকে এসেছিল একমাত্র জয়, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। তারপর থেকে হার, হার আর হার। আফগানিস্তান ৬৯ রানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলো। ট্রটের কথাই হলো সত্যি। শুরুটা দারুণ করেছিল আফগানিস্তান, তার ফল পেলো হাতেনাতে।
এএইচএ